মানব কল্যাণ প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর : মানুষের স্বাভাবিক অধিকার আর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ছাড়া মানব কল্যাণ মানব-অপমানে পরিণত হয়। লেখক বর্তমান পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখতে পান দুস্থ, অবহেলিত, বাস্তুহারা, স্বদেশ-বিতাড়িত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে।
আবার রিলিফ, রিহেবিলিটেশন প্রভৃতি শব্দের ব্যবহারও বাড়ছে। তিনি আরও প্রত্যক্ষ করেন রেডক্রসের মতো সেবাধর্মী সংস্থার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এগুলোকে তিনি একধরনের মানব-অপমান বলে মনে করেন। কারণ এসবের মাধ্যমে কখনোই প্রকৃত মানব-কল্যাণ সাধিত হয় না। এগুলো মানুষকে ছোটো করে রাখার কৌশল ছাড়া কিছু নয়। সুতরাং, মানুষের স্বাভাবিক অধিকার আর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ছাড়া মানব কল্যাণ মানব-অপমানে পরিণত হয়।
মানব কল্যাণ প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. ‘রাষ্ট্র জাতির যৌথ জীবন আর যৌথ চেতনারই প্রতীক’ – উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : আলোচ্য উক্তিটি দ্বারা জাতীয় জীবন ও জাতীয় চেতনার সাথে রাষ্ট্রের অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ককে বোঝানো হয়েছে। একটি জাতি যেভাবে জীবনযাপন করে, যে চেতনা ধারণ করে বেড়ে ওঠে রাষ্ট্রও সে অনুযায়ী পরিচিতি লাভ করে। রাষ্ট্র যদি তার নাগরিকদের আত্মমর্যাদাসম্পন্ন হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য না করে, তবে রাষ্ট্রও তার প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত হয়। অর্থাৎ যে রাষ্ট্র হাত পাতা আর চাটুকারিতাকে প্রশ্রয় দেয়, সে রাষ্ট্র কিছুতেই আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নাগরিক গড়ে তুলতে পারে না। কাজেই রাষ্ট্রের উচিত মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠতে সাহায্য করা এবং মানবিক বৃত্তি বিকাশের পথে যথাযথ ক্ষেত্র বা পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দ্বারা জাতীয় জীবন ও জাতীয় চেতনার সাথে রাষ্ট্রের এমন অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ককেই বোঝানো হয়েছে।
২. মানব-কল্যাণ কথাটা আমরা সস্তা ও মামুলি বানিয়ে ফেলেছি কীভাবে?
উত্তর : মানব-কল্যাণের প্রকৃত তাৎপর্য উপলব্ধি না করার ফলে আমরা একে সস্তা ও মামুলি বানিয়ে ফেলেছি। বর্তমান সমাজে মানুষ মানব কল্যাণ কথাটিকে ক্ষুদ্রার্থে ব্যবহার করে থাকে। একমুষ্টি ভিক্ষা দেওয়াকেও তারা মানব কল্যাণ বলে মনে করে থাকে। অথচ এতে মানুষের প্রকৃত কল্যাণ সাধিত হয় না, বরং মানব-মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করা হয়। মূলত মানব কল্যাণের প্রকৃত তাৎপর্য উপলব্ধি না করার কারণেই আমরা একে সস্তা ও মামুলি বানিয়ে ফেলেছি।
৩. কীভাবে বিজ্ঞানের অভাবনীয় আবিষ্কারকে ধ্বংসের পরিবর্তে সৃজনশীল মানবিক কর্মে নিয়োগ করা যায়? মানব কল্যাণ প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
উত্তর : মুক্ত বিচারবুদ্ধির সাহায্যে বিজ্ঞানের অভাবনীয় আবিষ্কারকে ধ্বংসের পরিবর্তে সৃজনশীল মানবিক কর্মে নিয়োগ করা যায়। প্রাবন্ধিক আবুল ফজল তাঁর প্রবন্ধে মানব-কল্যাণ কথাটিকে মানব-মর্যাদার সহায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রয়াস দেখিয়েছেন। তিনি মনে করেন মানুষের মর্যাদাবৃদ্ধি মানবকল্যাণের অন্যতম শর্ত। আর এ ধরনের মানব কল্যাণ বাস্তবায়িত করতে হলে বিজ্ঞানের অভাবনীয় আবিষ্কারকে ধ্বংসের পরিবর্তে সৃজনশীল মানবিক কর্মে নিয়োজিত করতে হবে। আর মুক্ত বিচারবুদ্ধির সাহায্যেই কেবল তা সম্ভব।
৪. মানব কল্যাণ মানব-অপমানে পরিণত হয়েছে কীভাবে?
উত্তর : মানুষের স্বাভাবিক অধিকার আর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ছাড়া মানব কল্যাণ মানব-অপমানে পরিণত হয়। লেখক বর্তমান পৃথিবীর দিকে তাকিয়ে দেখতে পান দুস্থ, অবহেলিত, বাস্তুহারা, স্বদেশ-বিতাড়িত মানুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। আবার রিলিফ, রিহেবিলিটেশন প্রভৃতি শব্দের ব্যবহারও বাড়ছে। তিনি আরও প্রত্যক্ষ করেন রেডক্রসের মতো সেবাধর্মী সংস্থার সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এগুলোকে তিনি একধরনের মানব-অপমান বলে মনে করেন। কারণ এসবের মাধ্যমে কখনোই প্রকৃত মানব-কল্যাণ সাধিত হয় না। এগুলো মানুষকে ছোটো করে রাখার কৌশল ছাড়া কিছু নয়। সুতরাং, মানুষের স্বাভাবিক অধিকার আর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ছাড়া মানব কল্যাণ মানব-অপমানে পরিণত হয়।
৫. যে রাষ্ট্র হাত পাতা বা চাটুকারিতাকে প্রশ্রয় দেয়, সে রাষ্ট্রের পরিণতি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : যে রাষ্ট্র হাত পাতা বা চাটুকারিতাকে প্রশ্রয় দেয়, সে রাষ্ট্র কখনোই আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নাগরিক সৃষ্টি করতে পারে না। হাত পাতা বা চাটুকারিতা মানবচরিত্রের দুটি নেতিবাচক দিক। যে মানুষ বা জাতি এই দুটি কাজকে প্রশ্রয় দেয়, তারা যেন প্রকারান্তরে নিজের বা ঐ জাতির মর্যাদাকেই ভূলুণ্ঠিত করে। ফলে ঐ ব্যক্তি যেমন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন হয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়, তেমনি ঐ জাতিও সুনাগরিক সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়। কারণ রাষ্ট্র জাতির যৌথ জীবন আর যৌথ চেতনারই প্রতীক।
৬. মানব-কল্যাণ কীভাবে মানব-মর্যাদার সহায়ক হয়ে উঠবে?
উত্তর : কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব হলে মানব কল্যাণ মানব-মর্যাদার সহায়ক হয়ে উঠবে। ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক কল্যাণময় পৃথিবী রচনার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। কল্যাণময় পৃথিবী বলতে তিনি এমন পৃথিবীকে বুঝিয়েছেন যেখানে মানব-মর্যাদা কখনো ক্ষুণ্ন হয় না। বরং সকল অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় সেখানে মানুষের উত্তরণ ঘটে। তিনি মনে করেন মুক্তবুদ্ধির সহায়তায় পরিকল্পনামাফিক পথে চললে তা সম্ভব; কারণ একমাত্র সুষ্ঠু পরিকল্পনাকারীকে সৃজনশীল মানবিক কর্মে নিয়োগ করা যায়। তাই বলা যায়, কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব হলেই মানব কল্যাণ মানব-মর্যাদার সহায়ক হয়ে উঠবে।
৭. মনুষ্যত্বের অবমাননা’ বলতে লেখক কী বুঝিয়েছেন? মানব কল্যাণ প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
উত্তর : মনুষ্যত্বের অবমাননা বলতে লেখক লোক দেখানো মামুলি বস্তুর দানকে বুঝিয়েছেন। সমাজে মানব-কল্যাণের নামে কিছু লোক মূলত এর অবমাননা করে। তারা সস্তা ও নিম্নমানের জিনিস দান-খয়রাত করে নিজেকে দানশীল প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে দানগ্রহণকারী ব্যক্তির মানবিক ও সামাজিক মর্যাদা ভলুণ্ঠিত হয়। লোক দেখানোর নিমিত্তে এমন দান গর্হিত কাজ। এজন্য লেখক একে মনুষ্যত্বের অবমাননা বলেছেন।
৮. ‘এ সত্যটা অনেক সময় ভুলে থাকা হয়।’ – কোন সত্যটা? ব্যাখ্যা করো। মানব কল্যাণ প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
উত্তর : সব রকম কল্যাণকর্মেরই যে সামাজিক পরিণতি রয়েছে, সে সত্যটা অনেক সময় ভুলে থাকা হয়। মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের সবকিছুর সঙ্গেই তার সম্পর্ক বিদ্যমান। ফলে মানুষের কর্মের সাথে যে কেবল ব্যক্তিগত সম্পর্ক থাকে তা নয়, তার সামাজিক পরিণতিও অবিচ্ছিন্ন। যেহেতু সব মানুষই সমাজের অঙ্গ তাই তার সব রকম কল্যাণ-কর্মেরও রয়েছে সামাজিক পরিণতি। আর এ সত্যটিই অনেক সময় ভুলে থাকা হয়।
৯. ‘দুঃখের বিষয়’ বলতে প্রাবন্ধিক কী বুঝিয়েছেন? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : আমরা যে বাংলাদেশের মহৎ প্রতিভাদের রেখে যাওয়া আদর্শের উত্তরাধিকারকে জীবনে প্রয়োগ করতে পারিনি, ‘দুঃখের বিষয়’ বলতে প্রাবন্ধিক এ বিষয়টি বুঝিয়েছেন। সত্যিকার মানব-কল্যাণ মহৎ চিন্তা-ভাবনার ফসল। যুগে যুগে বাংলাদেশে অনেক মহৎ প্রতিভার জন্ম হয়েছে। তাঁরা আমাদের জন্য মানবিক চিন্তা ও আদর্শের উত্তরাধিকার রেখে গেছেন। কিন্তু আমরা সেই আদর্শের পথে চলতে ব্যর্থ হয়েছি। ‘দুঃখের বিষয়’ বলতে প্রাবন্ধিক এ বিষয়টিকেই বুঝিয়েছেন।
১০. কীভাবে কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব বলে প্রাবন্ধিক মনে করেন?
উত্তর : প্রাবন্ধিক মনে করেন, মুক্তবুদ্ধির চর্চার মাধ্যমে সুপরিকল্পিত পথে কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব। ‘মানব-কল্যাণ’ প্রবন্ধে লেখক মানব-কল্যাণের প্রকৃত তাৎপর্য উপস্থাপনের চেষ্টা করেছেন। তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন অনেকে দুস্থ মানুষকে করুণাবশত দান-খয়রাত করাকে মানব কল্যাণ বলে মনে করেন। কিন্তু লেখকের মতে, এমন কাজ সংকীর্ণ মনোভাবের পরিচায়ক। কালে এভাবে কখনোই কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব নয়। তাঁর মতে, মানুষের সার্বিক মঙ্গলের প্রয়াসই হলো মানব-কল্যাণ। অর্থাৎ সঙ্গ অবমাননাকর অবস্থা থেকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থায় মানুষের উত্তরণ ঘটানোই মানব-কল্যাণ। তাই প্রাবন্ধিকের বিশ্বাস মুক্তবুদ্ধির চর্চার মাধ্যমে পরিকল্পনামাফিক পথেই কল্যাণময় পৃথিবী রচনা সম্ভব। মানব কল্যাণ প্রবন্ধের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর