বিলাসী গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর : মৃত্যুঞ্জয়ের বিসর্জন এর কারণ হল বিলাসিতার অকৃত্রিম ভালোবাসা। মৃত্যুঞ্জয় কায়স্থের ছেলে। তার বাপ মা বেঁচে নেই। গ্রামের আর দশটা ছেলের মত সেও লেখাপড়া করে। কিন্তু ছাত্র হিসেবে ভাল নয় বিধায় সে কখনো থার্ডক্লাস অতিক্রম করতে পারেনি। এদিকে মৃত্যুঞ্জয় অসুস্থ হয়ে পড়লে পাড়ার এক সাপুড়ের মেয়ে বিলাসী সেবা যত্ন দিয়ে তাকে সারিয়ে তোলে, ফলে বিলাসী সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
বিলাসী গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
১. খুড়া কোন বংশের?
উত্তর: খুড়া মিত্তির বংশের।
২. মৃত্যুঞ্জয়ের বাগানটা কত বিঘার ছিল?
উত্তর: মৃত্যুঞ্জয়ের বাগানটা কুড়ি-পঁচিশ ছিল।
৩. কোন যুক্তিকে কলি যুগ বলা হয়?
উত্তর: হিন্দু পুরাণে বর্ণিত চার যুগের শেষ যুগকে কলি যুগ বলা হয়।
৪. ‘বিলাসী’ গল্পের বর্ণনাকারী কে?
উত্তর: ‘বিলাসী’ গল্পের বর্ণনাকারী ন্যাড়া।
৫. বিলাসীর পারিবারিক পদবী কী?
উত্তর: বিলাসীর পারিবারিক পদবী হল মালো।
৬. কামাখ্যা কী?
উত্তর: কামাখ্যা হলো ভারতের আসাম রাজ্যে অবস্থিত প্রাচীন তীর্থস্থান। স্থানটি তান্ত্রিক সাধক ও উপাসকদের তন্ত্র মন্ত্র সাধনা জন্য বিখ্যাত।
৭. অন্নপাপ কী?
উত্তর: বর্ণবাদী হিন্দু সমাজের অনুশাসনে উচ্চবংশীয় লোক নিম্ন বংশের লোকের হাতের ভাত খেলে তাকে অন্নপাপ হিসেবে ধরা হয়।
৮. ‘কানাচ’ শব্দটির অর্থ কী?
উত্তর: ‘কানাচ’ শব্দটির অর্থ ঘরের পেছনে দিককার লাগানো জায়গা।
৯. ‘বুকফাটা শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘বুকফাটা’ শব্দটির অর্থ হৃদয়বিদারক।
বিলাসী গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর বিলাসী গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (সৃজনশীলসহ)
১. ‘ইহা আর একটি শক্তি’— বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘ইহা আর একটি শক্তি’— কথাটি দ্বারা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার প্রকৃত ভালোবাসার প্রসঙ্গকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
স্বামী-স্ত্রী বহুবছর একত্রে বসবাস করলেও সত্যিকারের ভালোবাসার সন্ধান খুব কম যুগলই পায়। আলোচ্য গল্পে প্রসঙ্গক্রমে গল্পকথক তাঁর এক আত্মীয়ার উদাহরণ টেনেছেন।
সেই নারী স্বামীর সাথে পঁচিশ বছর ঘর করেছে। অথচ স্বামীর মৃতদেহ আগলে পাঁচ মিনিটও একাকী থাকার সাহস তার নেই। এর কারণ প্রকৃত ভালোবাসার সম্পর্কের অনুপস্থিতি। স্বামীর মৃতদেহের কাছে থাকার জন্য প্রয়োজন ছিল ‘আর একটি শক্তি’ অর্থাৎ খাঁটি ভালোবাসা। প্রশ্নোক্ত উদ্ভিটির মধ্য দিয়ে এ বিষয়টিই ইঙ্গিতময় হয়ে উঠেছে।
২. “ভয় পাই বাড়ার সময় পাইলাম না”- উক্তিটির প্রেক্ষাপট বর্ণনা কর।
উত্তর: বাল্যবন্ধু মৃত্যুঞ্জয়কে দেখা শেষে বাড়ি ফেরার পথেই ‘বিলাসী’ গল্পের কথক ন্যাড়া উদ্ধত উক্তিটি করেছেন।
সাপুড়ে কন্যা বিলাসী একদিন সন্ধ্যার অন্ধকারে ন্যাড়া মৃত্যুঞ্জয়কে দেখতে পোরোবাড়িতে গেল। গভীর বনের মধ্যে দিয়ে অন্ধকার রাতে ফেরার পথে কিছুটা হলেও ভয় পাচ্ছিল। কিন্তু বিলাসীর সাহসের কথা মনে পড়তেই তার ভয় দূর হয়ে গেল। কেবল ভারতে থাকল, একটা মৃত্যু কল্প রোগী নিয়ে এমন স্থানে একা একটা মেয়ের রাত্রি পাড়ি দেওয়া কত কঠিন কাজ।
মৃত্যুঞ্জয় তো যে কোন মুহূর্তে মারা যেতে পারত। তখন নিশ্চয় মেয়েটিকে স্বামীর মৃতদেহের পাশে বসে একাকী রাত কাটাতে হতো। এ পরিপ্রেক্ষিতে ন্যাড়া বিলাসীর সাহসের উৎস হিসেবে আবিষ্কার করল স্বামী মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি তার সীমাহীন ভালোবাসা। এ সত্য আবিষ্কারের ন্যাড়ার মন এমনই আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল যে শ্বাপদসংকুল পথ পাড়ি দিতে গিয়ে সে ভয় পাওয়ার সময়ই পায় নি।
৩. তাহার বয়স আঠারো কি আঠাশ ঠাহর করিতে পারিলাম না’ কেন? বুঝিয়ে বল।
উত্তর: অসুস্থ মৃত্যুঞ্জয়ের সেবায় বিলাসী নিজেকে বিসর্জন দিয়েছে। রাতদিন সেবা করে করে বিলাসীর শরীর একেবারে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। এ কারণেই ন্যাড়া তার বয়স ঠাহর করতে পারে নি।মৃত্যুঞ্জয় একবার কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে আত্মীয়স্বজন কিংবা পাড়া-প্রতিবেশীদের কেউ তার সেবায় এগিয়ে আসেনি।
সাপুড়ে কন্যা বিদেশি মৃত্যুর কবল থেকে সে যাত্রায় মৃত্যুঞ্জয়কে রক্ষা করেছে। একদিন সন্ধ্যার অন্ধকারে ন্যাড়া মৃত্যুঞ্জয়কে দেখতেই পোরোবাড়িতে গেল। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখতে পায় বিদেশি মৃত্যুঞ্জয়ের সেবা করতে করতে ফুলদানির ফুলের মধু শুকিয়ে গেছে। তার প্রকৃত বয়স আঠারো কিংবা আঠাশ কোনটাই বুঝার উপায় ছিল না। তাই মেয়েরা আলোচ্য মন্তব্যটি করেছিল।
৪. বাঙালির মন্ত্রতন্ত্রের সাথে সাপের বিষের তুলনা প্রসঙ্গে ন্যাড়ার উক্তিটি ব্যাখ্যা কর। বিলাসী গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (সৃজনশীলসহ)
উত্তর: ‘বিলাসী’ গল্পে ন্যাড়া বাঙালির মন্ত্র তন্ত্রের সাথে সাপের বিষের তুলনা করে প্রকৃত সত্যটি উপস্থাপন করেছেন এবং দেখিয়েছেন যে বাঙালির মন্ত্র সিদ্ধ মিথ্যা হতে পারে কিন্তু সাপের বিষ কখনোই অকার্যকর হয় না।
মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীকে বিয়ে করে সমাজ থেকে বিতাড়িত হয় প্রচলিত প্রকারভেদ প্রথা সমাজে তার স্থান হয় না, কিন্তু মেসির প্রতি সে ছিল এক নিষ্ঠ। মৃত্যুঞ্জয় সাপুড়েবৃত্তিকে গ্রহণ করেছিল।
মৃত্যুঞ্জয় সাপুড়ে হোক বিলাসিতা চাননি। সমাজ থেকে বিতাড়িত হয়ে এসে বিলাসীকে বিয়ে করে সাপুড়ে হয়। সাপ ধরা এবং প্রসার তার পেশা তে পরিণত হয়। অবশেষে এনে শায়িত তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। গোয়ালার বাড়িতে সাপ ধরতে গিয়ে দংশিত হয় সে। ন্যাড়া এবং বিলাসী সহ সব সাপুড়ে তাদের সমস্ত বিদ্যার প্রয়োগ করেছে তাকে বাঁচানোর জন্য, কিন্তু তা কোনো কাজে আসেনি। তাই ন্যাড়া উল্লিখিত উক্তিটি করেছে।
৫. মৃত্যুঞ্জয়ের ‘জাতবিসর্জনের’ কারণ বর্ণনা কর।
উত্তর: মৃত্যুঞ্জয়ের বিসর্জন এর কারণ হল বিলাসিতার অকৃত্রিম ভালোবাসা।
মৃত্যুঞ্জয় কায়স্থের ছেলে। তার বাপ মা বেঁচে নেই। গ্রামের আর দশটা ছেলের মত সেও লেখাপড়া করে। কিন্তু ছাত্র হিসেবে ভাল নয় বিধায় সে কখনো থার্ডক্লাস অতিক্রম করতে পারেনি।
এদিকে মৃত্যুঞ্জয় অসুস্থ হয়ে পড়লে পাড়ার এক সাপুড়ের মেয়ে বিলাসী সেবা যত্ন দিয়ে তাকে সারিয়ে তোলে, ফলে বিলাসী সঙ্গে তার ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু গ্রামের রক্ষণশীল হিন্দুসমাজ কিছুতেই সে সম্পর্ক মেনে নেয়নি। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় তার ভালোবাসার টানে সাপুড়ে কন্যা বিলাসীকে বিয়ে করার ভেতর দিয়ে যার ধর্ম বিসর্জন দেয়। মৃত্যুঞ্জয় বিলাসীর ভালোবাসা যেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অপূর্ব সৃষ্টি।
বিলাসী গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
৬. কোন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে খুঢ়া মৃত্যুঞ্জয়ের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘বিলাসী’ গল্পের নায়ক মৃত্যুঞ্জয় কায়স্থের ছেলে। তার মা-বাবা কিংবা ভাই-বোন কেউ বেঁচে নেই। এ পৃথিবীর বুকে বলতে গেলে সে একা। তাই মৃত্যুঞ্জয়ের সম্পত্তি দখল করার উদ্দেশ্যে তার নামে কুৎসা রটনা করে বেড়াত।
মৃত্যুঞ্জয়ের ছিল গ্রামের এক প্রান্তে একটা প্রকাণ্ড আম-কাঁঠালের বাগান।
আর তার মধ্যে একটা প্রকাণ্ড পোরোবাড়ি। তাছাড়া তার ছিল এক জাতি খুড়া। খোঁড়ার কাজ ছিল ভাইপোর বিরুদ্ধে বলে দাঁড়ানো- দাঁড়ানো ‘সে গাঁজা খায়; সে গুলি খায়, এমনকি আর কত কি!’ সে বাগানের অর্ধেক অংশের দাবিদার বলেও সমাজে প্রচার করে বেড়াত। বস্তুত সম্পত্তির লোভেই সে মৃত্যুঞ্জয়ের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে বেড়াত।
৭. মৃত্যুঞ্জয়ের প্রতি খুড়োর বৈরী মনোভাবের কারণ কী? বিলাসী গল্পের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (সৃজনশীলসহ)
উত্তর: ‘বিলাসী’ গল্পে মৃত্যুঞ্জয় এর প্রতি বৈরী মনোভাব এর মূল কারণ মৃত্যুঞ্জয়ের বিশাল বাগানটি নিজের করে নেওয়ার লোভ। মৃত্যুঞ্জয়ের জ্ঞাতি খুড়ো সবসময় ভাইপো মৃত্যুঞ্জয়ের অনিষ্ট করার কাজে লেগে থাকত। তাকে কিভাবে সমাজের কাছে হেয় করা যায়, নিন্দিত করা যায়, সে চেষ্টায় তার কোনো ত্রুটি ছিল না। ভাইপোকে গ্রামবাসীর কাছে কোণঠাসা করার জন্য মৃত্যুঞ্জয়ের অন্য পাপের কথা প্রচার করেছে। খুড়ো মৃত্যুঞ্জয়ের কুড়ি পঁচিশ বিঘা গান নিজের নামে প্রতিষ্ঠার জন্য নানা ষড়যন্ত্র করত।
৮. ‘গ্রামের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয়ের ছিল এমনি সুনাম।’ বিষয়টি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: ‘গ্রামের মধ্যে মৃত্যুঞ্জয়ের এমনি সুনাম।’–এটি ‘বিলাসী’গল্পের লেখক এর ব্যাঙ্গাত্মক উক্তি।
আমরা জানি যে, সুনাম শব্দটি একটি আদর্শ অর্থ বহন করে, যা দিয়ে কারো প্রশংসা কে বোঝানো হয়। কিন্তু বিলাসী গল্পে উক্তিটি লেখক ব্যাঙ্গার্থে করেছেন। গল্পে পরোপকারী মৃত্যুঞ্জয়ের উপকার স্বীকার না করে রফি নিচু মনের মানুষ যখন তাকে অবহেলা অবজ্ঞা করেছে, লেখক তখনই সার্থক হবে উক্তিটি করেছেন।
মৃত্যুঞ্জয় শিক্ষার্থীদের কে খাওয়ানো, বই কিনে দেওয়া, বাচ্চাদের স্কুলের পাওনা মিটানো ইত্যাদি কাজের মধ্য দিয়ে যে মানবীয় গুণাবলীর পরিচয় দিয়েছিল, তৎকালীন সংকীর্ণমনা রাস্তা মনে রাখেনি; বরং তার অসুস্থতার সময় তাকে সেবা দিয়ে সুস্থ করে তোলার বিষয়কে পাপ হিসেবে দেখেছে, তাকে সমাজচ্যু করে মৃত্যুর দিকেই ঠেলে দিয়েছে।
৯. ‘বদন দগ্ধ না হয়’- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘বদন দন্ধ না হয়’-এর আভিধানিক অর্থ মুখ যেন না পোড়ে। কিন্তু এ কথাটি সুনাম যেন নষ্ট না হয় এই অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ‘বিলাসী’ গল্পের নায়ক বিজয়ের দেড় মাস প্রায় অচেতন অবস্থায় পড়েছিল জ্বরে। গ্রামের কেউ খবর নিতে আসেনি। সাপুড়ের মেয়ে বিলাসিতাকে সেবা-শুশ্রূষা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছে।
কৃতজ্ঞ মৃত্যুঞ্জয় তাকে বিয়ে করেছে। এতে গ্রামের বদন দন্ধ হয়েছে অর্থাৎ সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। বিষয়টি যেন বাইরের কেউ জানতে না পারে এবং একই সাথে ঘুরার স্বার্থোদ্ধার হয়, সেজন্য খুরা অভিভাবক হয়ে বলেছেন ব্যবস্থা নিতে। আর সংঘের যুবক ছেলেরা চলেছে গ্রামের বদন যেন দগ্ধ না হয় তারই একটা মীমাংসা করতে।
১০. ‘বাঙালির বিষ’ বলতে কী বুঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘বাঙালির বিষ’ বলতে বাঙালির ক্ষণস্থায়ী ক্রোধ বা বিদ্বেষকে বুঝানো হয়েছে।
বাঙালির রাগ আছে, হিংসা-বিদ্বেষ আছে। কিন্তু তা কখনো দিনের পর দিন বা দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে না। মনের মধ্যে প্রতিশোধ না নেওয়া পর্যন্ত পুষে রাখে না।