আমার পথ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (PDF)

আমার পথ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর : আত্মনির্ভরতার অভাবই কাজী নজরুল ইসলামের মতে দেশের দীর্ঘদিনের পরাধীনতার কারণ। কাজী নজরুল ইসলাম মনে করেন, আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে। তিনি বিশ্বাস করেন, এই আত্মনির্ভরতা যেদিন সত্যি সত্যিই আমাদের আসবে, সেইদিনই আমরা স্বাধীন হব। কিন্তু আমরা নিজের প্রতি বিশ্বাস না রেখে গান্ধীজির মতো মহাপুরুষের ওপর নির্ভর করেছিলাম। বলে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন বিলম্বিত হয়েছিল। অর্থাৎ স্পষ্টত বোঝা যায়, কাজী নজরুল ইসলাম আত্মনির্ভরতার অভাবকেই পরাধীনতার কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন।

আমার পথ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

১. কবি নিজেকে ‘অভিশাপ রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন কেন? আমার পথ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (PDF)
উত্তর : সমাজের অনিয়মকে ভেঙে ফেলতে কবির যে অবস্থান, তার প্রেক্ষিতে তিনি নিজেকে ‘অভিশাপ রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন। সমাজের প্রচলিত, পুরাতন নিয়মকে ভেঙে নতুনকে প্রতিষ্ঠা করা খুব সহজ নয়। এতে প্রতিনিয়ত সমাজরক্ষকদের আক্রমণের শিকার হতে হয়, নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। এসব জেনেও কবি তাঁর বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। সকল অন্যায়, অবিচার আর অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন। তাই তিনি নিজেকে ‘অভিশাপ রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন।

২. মেয়েলি বিনয়ের চেয়ে অহংকারের পৌরুষ অনেক অনেক ভালো-কেন?
উত্তর : নিজের সত্যকে অস্বীকার করে অতিরিক্ত বিনয় প্রদর্শন মেয়েলি বিনয়। তার থেকে আত্মবিশ্বাস ও সততার বলিষ্ঠ স্বীকৃতি প্রদর্শন করে পৌরুষকে জাহির করা, যাকে বলা যেতে পারে অহংকারের পৌরুষ, তা অনেক ভালো। মেয়েলি বিনয় দুর্বলতার নামান্তর; তার চেয়ে নিজেকে চিনে আপনার সত্যকে আপনার গুরু, পথপ্রদর্শক ক-ারি বলে জানা অনেক ভালো। কেউ কেউ এটাকে অহংকার বলে মনে করতে পারে। আত্মবিশ্বাসের স্বীকৃতি এ অহংকারকে পৌরুষের অহংকার বলাই সংগত। মেয়েলি বিনয়ের চেয়ে এ পৌরুষের অহংকার অনেক অনেক ভালো।

৩. ‘আমার পথ দেখাবে আমার সত্য।’ – কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিককে তাঁর কর্ণধার পথ দেখাবে।
কর্ণধার বলতে প্রাবন্ধিক মানুষের ভেতরকার ঐশ্বরিক শক্তি বা অলৌকিক ক্ষমতাকে বুঝিয়েছেন। মানুষের মগজ ও মন পরম স্রষ্টার পরম শক্তি জ্ঞানশক্তি ও প্রেমশক্তিতে ভরপুর। প্রাবন্ধিকের বিশ্বাস সত্য সব অসৎ শক্তিকে পরাজিত করে মানুষকে পূর্ণতার পথে নিয়ে যায়। তাই প্রাবন্ধিকের সত্য বা ঐশীশক্তি বা সৎ শক্তি সকল প্রকার আলস্য কর্ম-বিমুখতা, পঙ্গুত্ব, নৈরাজ্য, অবিশ্বাস ও জরাজীর্ণতাকে পিছনে ফেলে তাকে ন্যায় ও সত্যের পথ দেখাবে।

 

 

 

 

৪. কাজী নজরুল ইসলাম-এর মতে, দেশের দীর্ঘদিনের পরাধীনতার কারণ কী? আমার পথ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (PDF)
উত্তর : আত্মনির্ভরতার অভাবই কাজী নজরুল ইসলামের মতে দেশের দীর্ঘদিনের পরাধীনতার কারণ। কাজী নজরুল ইসলাম মনে করেন, আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে। তিনি বিশ্বাস করেন, এই আত্মনির্ভরতা যেদিন সত্যি সত্যিই আমাদের আসবে, সেইদিনই আমরা স্বাধীন হব। কিন্তু আমরা নিজের প্রতি বিশ্বাস না রেখে গান্ধীজির মতো মহাপুরুষের ওপর নির্ভর করেছিলাম। বলে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন বিলম্বিত হয়েছিল। অর্থাৎ স্পষ্টত বোঝা যায়, কাজী নজরুল ইসলাম আত্মনির্ভরতার অভাবকেই পরাধীনতার কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন।

৫. ‘মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম।’ কেন? আমার পথ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (PDF)
উত্তর : বিদ্রোহী ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা তুলে ধরেছেন। আমরা সবাই একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি। সবাই মিলে একই আকাশের তলে বসবাস করি, সবার রক্তই লাল, সৃষ্টিকর্তার আলো, বাতাস, খাদ্য উপভোগ করি। আবার আমরা সবাই একই সত্তার গুণগান করি। তাই ধর্মের মধ্যে কোনো বৈষম্য নেই। মানুষ হিসেবে আমরা একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি এজন্য প্রাবন্ধিকের কাছে ‘মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম’।

৬. ‘আমি আছি’- এই কথা না বলে সবাই বলতে লাগলাম ‘গান্ধীজি আছেন” – উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : “আমি আছি’ এই কথা না বলে সবাই বলতে লাগলাম গান্ধীজি আছেন”-উক্তিটিতে আমরা যে গান্ধীজির আদর্শ ঠিকমতো বুঝতে পারি নি তা বোঝানো হয়েছে। মহাত্মা গান্ধী জাতির অভিভাবকরূপে এদেশের মানুষদের স্বাবলম্বনের শিক্ষা দিচ্ছিলেন। প্রত্যেকটি মানুষকে শেখাচ্ছিলেন নিজের ওপর বিশ্বাস অটুট রাখতে। কিন্তু সেদিন আমরা তাঁর আদর্শ, তাঁর কথা ঠিক বুঝিনি। ফলে আমরা নিজের অস্তিত্বের ঘোষণা না করে বলেছিলাম, ‘গান্ধীজি আছেন’। আর নিজের পরিবর্তে গান্ধীজির ওপর নির্ভরশীলতার বিষয়টিই ব্যক্ত হয়েছে আলোচ্য উক্তিতে।

৭. অন্তরে মিথ্যার ভয় থাকলে প্রাবন্ধিক কেন বাইরের ভয়কে ভয় মনে করেন?
উত্তর : অন্তরে যদি ভণ্ডামি, ছলনা, দুর্বলতা থাকে তাহলে বাইরের যে-কোনো শক্তিই তাকে পরাজিত করে বলে প্রাবন্ধিক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন। যে-বাংলাদেশ সারা পৃথিবীর লোককে দিনের পর দিন নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতে পারে তারাই আজ সকলের দ্বারে ভিখারি। এদেশের ঐশ্বর্য বিদেশিরা লুটে নিয়ে যায় তার প্রতিবাদ না করে বাংলাদেশের মানুষেরা তাদের গোপনে সাহায্য করে বলে প্রাবন্ধিক আলোচ্য উক্তির অবতারণা করেছেন।

 

 

৮. কাজী নজরুল ইসলাম হিন্দু-মুসলমানদের মিলনের অন্তরায়কে দূর করতে চেয়েছিলেন কেন? আমার পথ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (PDF)
উত্তর : মানব-ধর্মকে সবচেয়ে বড় ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করায় এবং হিন্দু-মুসলমানের মিলন প্রত্যাশায় কাজী নজরুল ইসলাম হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায়কে দূর করতে চেয়েছিলেন। কাজী নজরুল ইসলাম আজীবন মানব-ধর্মে বিশ্বাসী। তাঁর কাছে মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায় বা ফাঁকি কোনখানে তা দেখিয়ে দিয়ে এর গলদ দূর করা এবং দেশব্যাপী মানব-ধর্ম তথা সব ধর্মের মানুষের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা। আর এই কারণেই তিনি হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায় দূর করতে চেয়েছিলেন।

 

 

৯. ‘ভুলের মধ্য দিয়েই সত্যকে পাওয়া যায়।’ – বুঝিয়ে লেখ।
উত্তর : পৃথিবীতে যেমন অন্ধকার ভেদ করে আলো উদ্ভাসিত হয় তেমনি ভুলের পাহাড়ের মধ্য দিয়েই প্রকৃত সত্যের সন্ধান পাওয়া যায়। মানুষ পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর এই পৃথিবীর রূপ-রস-গন্ধের দ্বারা আকৃষ্ট হয়। ইন্দ্রিয়ের দ্বারা সে প্রতিনিয়ত ভুল করে। সে ভুল যদি নিজের জ্ঞান দ্বারা সে নিজে উপলব্ধি করে তাহলে নিজেকে সংশোধন করা যায়। সংশোধিত হওয়ার পর সে তার প্রকৃত সত্য খুঁজে পায়। তাই এ কথা বলা যায় যে, মানুষ ভুল করে, সে ভুল আবার কখনো ফুল হয়ে ফুটে ওঠে।

১০. ‘যার নিজের ধর্মে বিশ্বাস আছে, যে নিজের ধর্মের সত্যকে চিনেছে, সে কখনো অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না।’ – ব্যাখ্যা কর। আমার পথ অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (PDF)
উত্তর : সুন্দরের পূজারি কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘আমার পথ’ প্রবন্ধে মানব-ধর্মের কথা বলেছেন। ধর্মে কোনো ভেদাভেদ বা বৈষম্য নেই। পৃথিবীতে প্রত্যেক ধর্মই সত্য। শুধু ধর্মের ক্রিয়াকলাপ বা আচার-অনুষ্ঠান এক এক ধর্মের এক এক রকম। যে তার নিজের ধর্মের বিধি-বিধান সঠিকভাবে দিব্যজ্ঞানে চিনতে পারে তার অন্য ধর্মের প্রতি কোনো বিদ্বেষ বা অবহেলা থাকতে পারে না। তাই নিজ ধর্মের স্বরূপ জানলে নিজ ধর্মের প্রতি বিশ্বাস স্থাপিত হয় এবং সেই-ই প্রকৃত সত্য জানতে পারে বলে তার অন্য ধর্মের প্রতি ঘৃণা থাকে না।

Answer Sheet

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *