(PDF) সহজ ভাষায় শিখে নাও বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ

বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ hsc, বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ  pdf, বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতা আবৃত্তি, বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর, বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার শব্দার্থ, বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন, বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন, বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার মূল বক্তব্য, বিভীষণের প্রতি  মেঘনাদ কবিতার প্রতি লাইনের ব্যাখ্যা, বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতার mcq , বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ


একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা সিলেবাসের সবচেয়ে বড় ও কঠিন কবিতা ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’। আসলে এটা দেখতে যতটা ভয়ংকর লাগে ততটা ভয়ংকরও নয়। একবার এর মূলভাবটা বুঝে গেলেই দেখবে কবিতাটি বেশ সহজ লাগছে। কোর্সটিকার আজকের পাঠে কঠিন এই কবিতাটি খুব সহজ করে বুঝিয়ে দিতে তোমাদের সাথে আছি আমি শামীম রাফসান

এ কবিতার কথাগুলো বুঝতে প্রথমত আমাদের বর্তমান থেকে একটু অতীতে যেতে হবে। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী রাম ও রাবণের যুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুটা ধারণা লাভ করতে হবে। তাহলে চলো, শুরু করি…

প্রারম্ভ: ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ’ কাব্যাংশটুকু মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধকাব্য’ নামক মহাকাব্যের ‘বধো’ নামক ষষ্ঠ সর্গ থেকে নেয়া হয়েছে। এ কবিতায় মাতৃভূমির প্রতি রাবণের জ্যেষ্ঠ পুত্র মেঘনাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং রাবণের ছোট ভাই বিভীষণের বিশ্বাসঘাতকতা ও দেশদ্রোহিতার বিরুদ্ধে সুগভীর ঘৃণা প্রকাশিত হয়েছে ।

 

 

প্রেক্ষাপট: ঘটনাচক্রে অযোধ্যার রাজা দশোরথের পুত্র রামকে স্ত্রী সীতাসহ পঞ্চবটী বনে বনবাসে যেতে হয়। রামের সঙ্গে যায় তাঁর ছোট ভাই লক্ষ্মণ। পঞ্চবটী বনে রাম-লক্ষ্মণ-সীতা সুখেই ছিল। একদিন এই বনে বেড়াতে আসে লঙ্কার রাজা রাবণের বোন শূর্পনখা। লক্ষ্মণকে ভালো লেগে যায় শূর্পনখার, আর ওমনি সে লক্ষ্মণকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে বসে। লক্ষ্মণ মানুষ আর শূর্পনখা রাক্ষসী। মানুষ আর রাক্ষসীর মাঝে তো সম্পর্ক হতে পারে না। তাই লক্ষ্মণ রাক্ষসী শূর্পনখার

ভালোবাসার মর্যাদা তো দেয়নি বরং শূর্পনখার নাক কেটে দেয়। ক্রুদ্ধ ও অপমানিত শূর্পনখা লঙ্কায় ফিরে গিয়ে তার ভাই রাবণের কাছে নালিশ জানায়। রাবণ প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য পঞ্চবটী বনে এসে ছলনার আশ্রয়ে সীতাকে অপহরণ করে এবং বলপ্রয়োগ করে লঙ্কায় নিয়ে যায়।

সীতাকে উদ্ধারের জন্য রাম-লক্ষ্মণ লঙ্কা আক্রমণ করে। যুদ্ধে রাবণের ভাই কুম্ভকর্ণ ও পুত্র বীরবাহু মারা যায়। তারপর রাবণ পরবর্তী যুদ্ধের সেনাপতি হিসেবে পুত্র মেঘনাদকে দায়িত্ব দেন। যুদ্ধ জয় নিশ্চিত করার জন্য মেঘনাদ যুদ্ধযাত্রার আগে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবতা অগ্নিদেবের পূজা সম্পন্ন করতে যায়। কারণ, পুজো সম্পন্ন করতে পারলেই মেঘনাদ রাম-লক্ষ্মণকে পরাজিত করতে পারবে।

এদিকে রাবণের ভাই বিভীষণ রাম-লক্ষ্মণের সাথে হাত মেলায়। বিভীষণের ব্যক্তিগত ধারণা এই যে, তার ভাই রাবণ নারী অপহরণকারী ও মহাপাপী। তার পাপেই লঙ্কা নগরী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তার চোখে রাম-লক্ষ্মণ ধর্মপরায়ণ ও ন্যায়নিষ্ঠ। তাই সে তার ভাইয়ের দলত্যাগ করেছে। কিন্তু এটি যে বিশ্বাসঘাতকতা, সেটি সে বুঝতে পারে না।

এজন্যই বাংলা প্রবাদে বলা হয়ে থাকে ‘ঘরের শত্রু বিভীষণ!’ সে লক্ষ্মণকে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে নিয়ে আসে। মায়াদেবীর বিশেষ মন্ত্র দ্বারা শতশত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে লক্ষ্মণ নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রবেশ করে। তখন নিরস্ত্র, বিস্মিত মেঘনাদ ও বিভীষণের মধ্যে যে কাল্পনিক কথোপকথন হয় তার আলোকেই ‘বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতা’র সূচনা। (বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ)
চলো… কবিতাটির তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ করি: 

 

 

এতক্ষণে-অরিন্দম কহিলা বিষাদে-
জানিনু কেমনে আসি লক্ষ্মণ পশিল
রক্ষঃপুরে! হায়, তাত, উচিত কি তব
এ কাজ, নিকষা সতী তোমার জননী,

ব্যাখ্যা: এখানে অরিন্দম বলতে মেঘনাদকে বোঝানো হয়েছে। লক্ষ্মণকে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে উপস্থিত হতে দেখে মেঘনাদ বিস্মিত ও মর্মাহত। তার চাচার এহেন কাজ করা কি উচিত হয়েছে? নিকষা সতী যার মা, তার পক্ষে এমন কাজ করা অনুচিত ।

সহোদর রক্ষঃশ্রেষ্ঠ? শূলিশম্ভুনিভ
কুম্ভকর্ণ? ভ্রাতৃপুত্র বাসববিজয়ী!
নিজগৃহপথ, তাত, দেখাও তস্করে?
চণ্ডালে বসাও আনি রাজার আলয়ে?

ব্যাখ্যা: তাছাড়া যেখানে আছে রাবণের ভ্রাতা (ভাই) কুম্ভকর্ণ, যে কিনা শূলপাণি মহাদেবের মতো। আর যেখানে তার ভাইয়ের পুত্র স্বয়ং মেঘনাদ দেবতাদের রাজা ইন্দ্রকে জয় করেছে। মেঘনাদের মনে প্রশ্ন জাগে-এত কিছুর পরেও শত্রুকে পথ চিনিয়ে নিজের গৃহে নিয়ে এলে? চোরকে প্রশ্রয় দিলে? চণ্ডালের মত নিম্নশ্রেণির কাউকে রাজকক্ষে স্থান দিলে?

কিন্তু নাহি গঞ্জি তোমা, গুরু জন তুমি
পিতৃতুল্য। ছাড় দ্বার, যাব অস্ত্রাগারে,
পাঠাইব রামানুজে শমন-ভবনে,
লঙ্কার কলঙ্ক আজি ভঞ্জিব আহবে।

ব্যাখ্যা: কিন্তু যাই হোক, গুরুজনের প্রতি তার গভীর শ্রদ্ধাবোধ। কারণ বিভীষণ পিতৃতুল্য। মেঘনাদ অস্ত্রাগারে গিয়ে যুদ্ধের সাজ গ্রহণ করে আসবে বলে তাকে দ্বার ছাড়তে অনুরোধ জানায়। কারণ সে লক্ষ্মণকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে চায়। তার সাথে যুদ্ধ করে তাকে পরাজিত করে লঙ্কার সমস্ত কলঙ্ক-কালিমা মুছে দিতে চায়।

উত্তরিলা বিভীষণ, ‘বৃথা এ সাধনা,
ধীমান্। রাঘবদাস আমি; কী প্রকারে
তাঁহার বিপক্ষ কাজ করিব, রক্ষিতে
অনুরোধ?’ উত্তরিলা কাতরে রাবণি;-
‘হে পিতৃব্য, তব বাক্যে ইচ্ছি মরিবারে!
রাঘবের দাস তুমি? কেমনে ও মুখে
আনিলে এ কথা, তাত, কহ তা দাসেরে!’

ব্যাখ্যা: মেঘনাদের কথা ও অনুরোধ শুনে বিভীষণ উত্তর দিল, ‘তোমার এসব চেষ্টা বৃথা।’ তোমার সাধনা ব্যর্থতা ছাড়া আর কিছু নয়। কারণ, মেঘনাদের অনুরোধ রক্ষা করতে গিয়ে বিভীষণ লক্ষ্মণের বিরুদ্ধে গিয়ে কাজ করতে পারেনা। তখন রাবণি (রাবণের পুত্র মেঘনাদ) কাতর সুরে বলল – হে পিতৃব্য, তোমার কথা শুনে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে। রঘুবংশের শ্রেষ্ঠ যে সন্তান, তুমি তার দাস? একথা তুমি মুখে আনলে কী করে?

 

 

স্থাপিলা বিধুরে বিধি স্থাণুর ললাটে;
পড়ি কি ভূতলে শশী যান গড়াগড়ি
ধূলায়? হে রক্ষোরথি, ভুলিলে কেমনে
কে তুমি? জনম তব কোন মহাকূলে?

ব্যাখ্যা: বিধাতা চাঁদকে আকাশে নিশ্চল করে স্থাপন করেছেন তাই বলে চাঁদ কি ধুলায় গড়াগড়ি যায়? তাহলে তুমি কী করে এমন হলে, তুমি রক্ষকুলের বীর হয়ে কী করে নিজের পরিচয় ভুলে গেলে? তুমি কি ভাবতে পারো না কোন মহাকূলে তোমার জন্ম?

কে বা সে অধম রাম? স্বচ্ছ সরোবরে
করে কেলি রাজহংস পঙ্কজ-কাননে;
যায় কি সে কভু, প্রভু, পঙ্কিল সলিলে,
শৈবালদলের ধাম? মৃগেন্দ্র কেশরী,
কবে, হে বীরকেশরী, সম্ভাষে শৃগালে
মিত্রভাবে? অজ্ঞ দাস, বিজ্ঞতম তুমি,
অবিদিত নহে কিছু তোমার চরণে।

ব্যাখ্যা: আর কে সে অধম রাম তা কি তুমি জান না? রাঁজহাস কি কখনো কাদা, ময়লা, ঘোলা জলে যায়, সাঁতার কাটে? সে তো স্বচ্ছজলে সরোবরে জলকেলি করে বেড়ায়। সে তো বদ্ধ জলাশয়ে ঘোরাঘুরি করে না। পশুরাজ সিংহকে কি কখনও দেখেছ শিয়ালের সাথে সখ্য গড়ে তুলতে কিংবা সম্মানে তার কাছে মাথা নত করতে? আমি জ্ঞানহীন মূর্খ, তোমার আজ্ঞাবহ, কিন্তু তুমি তো সর্বজ্ঞানে মহাজ্ঞানী, গুণী। তোমার তো কিছুই অজানা নয়।

ক্ষুদ্রমতি নর, শূর, লক্ষ্মণ, নহিলে
অস্ত্রহীন যোধে কি
ক্ষুদ্রমতি নর, শূর, লক্ষ্মণ, নহিলে
অস্ত্রহীন যোধে কি সে সম্বোধে সংগ্রামে?
কহ, মহারথী, এ কি মহারথীপ্রথা?
নাহি শিশু লঙ্কাপুরে, শুনি না হাসিবে
এ কথা! ছাড়হ পথ; আসিব ফিরিয়া
এখনি! দেখিব আজি, কোন্ দেববলে,
বিমুখে সমরে মোরে সৌমিত্রি কুমতি!

ব্যাখ্যা: ছোট মনের হীন মানসিকতাসম্পন্ন লক্ষ্মণ। তা না হলে সে কীভাবে আমাকে অস্ত্রহীন অবস্থায় যুদ্ধ করতে বলে? হে মহারথী, তুমিই বলো, নিরস্ত্রের সাথে যুদ্ধ করা কি কোন বীরের আচরণ? এমন কথা শুনে একজন শিশুও খুঁজে পাওয়া যাবে না লঙ্কাপুর, যারা না হাসবে। তাই আমাকে যেতে দাও, আমি এখনি ফিরে আসব। আর লক্ষ্মণকে শায়েস্তা করব।

দেব-দৈত্য-নর-রণে, স্বচক্ষে দেখেছ,
রক্ষ:শ্রেষ্ঠ, পরাক্রম দাসের! কী দেখি
ডরিবে এ দাস হেন দূর্বল মানবে?

ব্যাখ্যা: হে বীর, দেব দৈত্যদের সাথে আমার যুদ্ধ তো তুমি স্বচক্ষে দেখেছ। সেখানে আমার পরাক্রম (বীরত্ব) তুমি জানো। তাহলে এই দুর্বল মানবকে (লক্ষ্মণ) দেখে আমি কেন ভয় পাবো?

 

 

নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে প্রগলভে পশিল
দম্ভী; আজ্ঞা কর দাসে, শাস্তি নরাধমে।
তব জন্মপুরে, তাত, পদার্পণ করে
বনবাসী! হে বিধাত:, নন্দন-কাননে
ভ্রমে দুরাচার দৈত্য? প্রফুল্ল কমলে
কীটবাস? কহ তাত, সহিব কেমনে?
হেন অপমান আমি,- ভ্রাতৃ-পুত্র তব?
তুমিও, হে রক্ষোমণি, সহিছ কেমনে?’

ব্যাখ্যা: নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে নির্ভীকচিত্তে যে অহংকার লক্ষ্মণ করছে, তুমি আমাকে অনুমতি করো, সেই নরাধমকে উপযুক্ত শাস্তি দান করি। হে প্রভু, এই শ্রীমতি মনোরম বাগানে ভুল করে কেন এই দুরাচার দানবকে নিয়ে এলে। এ কি অপূর্ব সুন্দর বিকশিত ফুলের মধ্যে কীটের মতো নয়? বলো কী করে তা আমি মেনে নিব? তোমারই ভাইয়ের পুত্র হয়ে কী করে সহ্য করব আমি এই অপমান? আর রক্ষোকুলের বীর হয়ে তুমিও তা কীভাবে সহ্য করছো?

মহামন্ত্র-বলে যথা নম্রশির: ফণী,
মলিনবদন লাজে, উত্তরিলা রথী
রাবণ-অনুজ, লক্ষি রাবণ-আত্মজে;
‘নহি দোষী আমি, বৎস; বৃথা ভর্ৎস মোরে
তুমি! নিজ কর্ম-দোষে, হায়, মজাইলা
এ কনক-লঙ্কা রাজা, মজিলা আপনি!’

ব্যাখ্যা: মহামন্ত্র বলে ফণা তোলা সাপ যেমন মাথা নত করে, তুমিও তাহলে তেমনি করে মাথা নত করছো? তখন মলিনমুখে রথী (বিভীষণ) উত্তর দিল, ‘এসবের জন্য আমি দায়ী নই। আমাকে অযথাই দোষারোপ করছ বাছা। বৃথাই তুমি আমাকে তিরস্কার করছ। তোমার নিজের কর্ম-দোষেই তুমি আজ এমন বিপদগ্রস্থ। তোমার এ অবস্থার জন্য তুমিই দায়ী।’

বিরত সতত পাপে দেবকুল;
এবে পাপপূর্ণ লঙ্কাপূরী;
প্রলয়ে যেমতি বসুধা
ডুবিছে লঙ্কা এ কালসলিলে!
রাঘবের পদাশ্রয়ে রক্ষার্থে আশ্রয়ী
তেঁই আমি। পরদোষে কে চাহে মজিতে?”

ব্যাখ্যা: মনে রেখো, দেবতারা সদা পাপ থেকে দূরে থাকেন। লঙ্কাপুরী এখন পাপে পূর্ণ। ঝড়-ঝঞ্ঝায় পৃথিবীর মত ডুবতে বসেছে লঙ্কাপুরী। তাই আমি রঘুবংশের রামচন্দ্রের পদতলে আশ্রয় নিয়েছি। তাছাড়া অন্যের দোষ মাথায় নিয়ে কে বিপদে পড়তে চায়?

রুষিলা বাসবত্রাস! গম্ভীরে যেমতি
নিশীথে অম্বরে মন্দ্রে জীমূতেন্দ্র কোপি
কহিলা বীরেন্দ্র বলী, ‘ধর্মপথগামী,
হে রাক্ষসরাজানুজ, বিখ্যাত জগতে
তুমি;- কোন ধর্ম মতে, কহ দাসে, শুনি,
জ্ঞাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব, জাতি,- এ সকলে দিলা
জলাঞ্জলি?

ব্যাখ্যা: মেঘনাদ (বাসবত্রাস) ক্ষুব্ধ হলো। সেই ক্ষোভ গভীর রাতে স্তব্ধ পরিবেশ ভেঙে আকাশে হওয়া মেঘের গর্জনের মতো। বীর (মেঘনাদ) তখন আক্রোশে বিভীষণকে বলল – তুমি জগত বিখ্যাত, কোন ধর্মানুসারে এমন কথা বলছ? কোন ধর্মমতে আত্মীয়তা, জাতিত্ব, ভ্রাতৃত্ব সবকিছু জলাঞ্জলি দিলে?

শাস্ত্রে বলে, গুণবান্ যদি
পরজন, গুণহীন স্বজন, তথাপি
নির্গুণ স্বজন শ্রেয়: পর: পর: সদা!
এ শিক্ষা, হে রক্ষোবর, কোথায় শিখিলে?
কিন্তু বৃথা গঞ্জি তোমা! হেন সহবাসে,
হে পিতৃব্য, বর্বরতা কেন না শিখিবে?
গতি যার নীচ সহ, নীচ সে দুর্মতি।”

ব্যাখ্যা: এজন্য শাস্ত্রে বলে গুণবান হলেও পর কখনো আপন হয় না। গুণহীন, মূর্খ হলেও আপনজন আপনই থাকে। তাই গুণবান পরজন থেকে গুণহীন স্বজন উত্তম। এমন শিক্ষা তুমি কোত্থেকে পেলে? অবশ্য আমি অযথাই তোমাকে তিরস্কার করছি। যাদের সাথে থাকো, তাদের থেকে হীনতা, বর্বরতা কেন শিখবে না? চিন্তা যার অসৎ, হীন যাদর মানসিকতা, সে তো নিচের দিকেই ধাবিত হবে।


বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ HSC ICT : সকল অধ্যায়ের সাজেশান্স ও উত্তর পেতে এখানে ক্লিক করো    


এক নজরে এই কবিতার গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রগুলো , বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ

মেঘনাদ: বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ কবিতায় মেঘনাদ প্রধান চরিত্র। কাব্যাংশের কেন্দ্রীয় চরিত্র হিসেবে ফুটে উঠা মেঘনাদ একজন বীর যোদ্ধা এবং নিবেদিত দেশপ্রেমিক। তিনি নিজ মাতৃভূমি, বংশ ও গোত্রের ঐশ্বর্যের বর্ণনার মাধ্যমে এ কবিতার সম্পূর্ণ অংশজুড়ে তাঁর চাচা বিভীষণকে রামের সঙ্গ ত্যাগ করে দেশমাতৃকার দলে যোগ দেয়ার অনুরোধ করেন।

বিভীষণ: মেঘনাদের সম্পূর্ণ বিপরীত ছিলেন বিভীষণ।দেশপ্রেম এর চেয়ে তার কাছে প্রাধান্য পায় রামের ধর্মদীক্ষা। তাই কাব্যাংশে তাকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে একজন বিশ্বাসঘাতক এবং দেশদ্রোহী হিসেবে। যিনি রামের দলে যোগ দিয়ে নিজ পরিবারের সাথেও বিশ্বাসঘাতকতা করেন।

লক্ষ্মণ: চমৎকার এ কবিতায় লক্ষ্মণকে বর্ণনা করা হয়েছে একজন নীচ ও ভীতু যোদ্ধা হিসেবে। যে কিনা বিভীষণের সাহায্য নিয়ে নিরস্ত্র মেঘনাদের উপর হামলা করেন এবং পরিশেষে তাঁকে বধ করেন। একজন বীর যোদ্ধা কখনই তার নিরস্ত্র প্রতিপক্ষের উপর আক্রমণ করতে পারেন। তাই এখানে লক্ষ্মণকে একজন কাপুরুষ, কপট ও নীচ চরিত্র হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।

 

বিভীষণের প্রতি মেঘনাদ

রাম: কাব্যাংশের প্রধান খলনায়ক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে রামকে। তারই ভ্রাতা লক্ষ্মণ মায়া দেবীর আনুকূল্যে শত
শত প্রহরীর চোখ ফাঁকি দিয়ে বিভীষণের সহায়তায় নিরস্ত্র মেঘনাদকে আক্রমণ করেন।  রামায়ণে রাম যদিও
একজন নায়ক কিন্তু দেশপ্রেমিক লেখকের চোখে তিনি হয়ে উঠেছেন একজন খলনায়ক।

রাবণ: একজন বীর যোদ্ধা। কাব্যাংশের একটি বিরাট অংশজুড়ে মেঘনাদের মুখে ফুটে উঠে রাবণের প্রশংসা। রক্ষঃশ্রেষ্ঠ, রাজহংশ এবং মৃগেন্দ্র কেশরীর মতো প্রশংসামূলক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে রাবণের বর্ণনায়

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *