মাসি পিসি গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর : আহ্লাদি যদিও সবকিছু মেনে নিয়ে আবারও অত্যাচারী স্বামীর ঘরে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কিন্তু যখন সে ভাবে স্বামীর অত্যাচারের কথা এবং মাসি-পিসিকে ছেড়ে থাকার কথা, তখন সে ভয়ে শিউরে ওঠে। তার দুই পাশে মাসি-পিসিকে না নিয়ে শুলে ঘুম আসে না। তাই এই পরিস্থিতির ব্যতিক্রম চিন্তায় সে ভয়ে শিউরে ওঠে।
মাসি পিসি গল্পের অনুধাবনমূলক প্রশ্ন উত্তর
১. ‘যুদ্ধের আয়োজন করে তৈরি হয়ে থাকে মাসি-পিসি’ উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : ষড়যন্ত্র করে আহ্লাদিকে গোকুল তুলে নিতে আসলে মাসি-পিসি তাদের কৌশলে প্রতিহত করে পরবর্তী আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য প্রস্তুত থাকার বিষয়টিকে ‘মাসি-পিসি’ গল্পের লেখক প্রদত্ত উক্তি দ্বারা বুঝিয়েছেন। গোকুল আহ্লাদিকে অনৈতিকভাবে পেতে চায়।
মাসি-পিসিকে সে ছলে-বলে-কৌশলে বশীভূত করতে না পেরে কানাই চৌকিদারের মাধ্যমে মাসি-পিসিকে কাছারি বাড়ি পাঠিয়ে তার গুণ্ডা-বাহিনী দিয়ে তুলে নেওয়ার ফাঁদ পাতলে সংসার-অভিজ্ঞ মাসি-পিসি তা বুঝতে পারে এবং বঁটি ও রামদার ভয় দেখিয়ে এবং প্রতিবেশীদের ডেকে তাদের তাড়িয়ে দেয়। গুণ্ডা বাহিনী তাদের ঘরে আগুন দিতে পারে ভেবে জল ও ভেজা কাঁথার ব্যবস্থা করে রাখে, হাতের কাছে রাখে বঁটি আর দা। এভাবেই মাসি গুণ্ডা বাহিনীকে প্রতিরোধ করার জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
২. আহ্লাদিকে স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে যেতে হয় কেন?
উত্তর : স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে আহ্লাদিকে স্বামীর ঘর ছেড়ে যেতে হয়। আহ্লাদির বিয়ে হয় নেশাখোর পাষ- জগুর সাথে। জগু কারণে-অকারণে আহ্লাদিকে মারধর করে। নেশার টাকা জোগাড় না হলে আহ্লাদিকে ঘরের খুঁটির সাথে বেঁধে অত্যাচার করে। লাথি, চড়, বাড়ি এমন কোনো মাধ্যম নেই যার দ্বারা জগু আহ্লাদির উপর অত্যাচার করেনি। যার জন্য তাকে স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে আসতে হয়।
৩. মাসি-পিসির জমানো টাকা কেন খরচ হয়ে গিয়েছিল?
উত্তর : দুর্ভিক্ষের সময় খাবার কিনতে মাসি-পিসিদের জমানো রুপোর টাকা আধুলি সিকি খরচ হয়ে গিয়েছিল। মাসি-পিসিরা আহ্লাদির বাবার বাড়িতে আশ্রিতা। ওদিকে দেশে মন্বয়ন্তর। কোথাও কোনো কাজ নেই, খাবার নেই, সামর্থ্যও নেই। তাই তারা তাদের জমানো টাকা দিয়ে কোনোরকমে খাবার কিনে খেয়ে বেঁচেছে। এজন্য তাদের জমানো রুপোর টাকা আধুলি সিকি খরচ হয়ে গিয়েছিল।
৪. আহ্লাদিকে জগু কেন মারধর করে?
উত্তর : নেশার টাকা সংগ্রহ করতে না পেরে টাকা জোগাড় করার লোভে জগু আহ্লাদিকে মারধর করতো। পাষণ্ড জগু নেশা করে। কিন্তু সব-সময় নেশার জিনিস কেনার টাকা তার কাছে থাকে না। সে সংসার এবং স্ত্রীর প্রতিও উদাসীন। নেশার ঘোরে থেকে সে তার স্ত্রী আহ্লাদির ওপর নির্যাতন চালায়। বউয়ের ওপর চড়াও হয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় বউকে খুঁটির সাথে বেঁধে রেখে মারধর করে।
৫. মাসি-পিসি রোজগারের জন্য কী উপায় খোঁজে?
উত্তর : মাসি-পিসি জীবন চালাতে হিমশিম খায়। দুর্ভিক্ষের জন্য কোথাও রোজগার নেই। তাই তারা বেঁচে থাকার জন্য ভিন্ন উপায়ে রোজগারের চিন্তা-ভাবনা করে। তারা সিদ্ধান্ত নেয় গ্রাম থেকে তরিতরকারি ফলমূল কিনে নিয়ে শহরে গিয়ে বিক্রি করে কিছু রোজগার করবে এবং এটা ভেবেই তারা এ কাজে হাত দেয়।
৬. জগু কেন মামলা করতে চাইল?
উত্তর : জগু তার বৌ আহ্লাদিকে ফিরিয়ে আনার জন্য মামলা করতে চাইল। জগুর অত্যাচারে ঘর ছেড়ে চলে আসে আহ্লাদি। তারপর জগু তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে নিতে এসেছে তার শ্বশুরের রেখে যাওয়া সম্পত্তির লোভে। কিন্তু মাসি-পিসি আহ্লাদিকে পাঠাতে নারাজ। তা ছাড়া আহ্লাদিও যেতে রাজি নয়। আহ্লাদিকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য জগু মামলা করতে চায়।
৭. ঈষৎ তন্দ্রার ঘোরে আহ্লাদি শিউরে ওঠে কেন?
উত্তর : সংসারে নিজের অবস্থান, অত্যাচারী স্বামীর ঘরে ফিরে যাওয়ার আশঙ্কা ইত্যাদি ভাবতে ভাবতে তন্দ্রাচ্ছন্ন হওয়ার কারণে সে শিউরে উঠেছিল। আহ্লাদি যদিও সবকিছু মেনে নিয়ে আবারও অত্যাচারী স্বামীর ঘরে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, কিন্তু যখন সে ভাবে স্বামীর অত্যাচারের কথা এবং মাসি-পিসিকে ছেড়ে থাকার কথা, তখন সে ভয়ে শিউরে ওঠে। তার দুই পাশে মাসি-পিসিকে না নিয়ে শুলে ঘুম আসে না। তাই এই পরিস্থিতির ব্যতিক্রম চিন্তায় সে ভয়ে শিউরে ওঠে।
৮. আহ্লাদি কেন স্বামীর ঘরে যেতে চায় না?
উত্তর : পাষণ্ড স্বামীর অত্যাচার, নির্যাতনের ভয়ে আহ্লাদি স্বামীর ঘরে যেতে চায় না। আহ্লাদির স্বামী জগু নেশাখোর, লম্পট। তার মধ্যে কোনো মানবিকতার ছোঁয়া নেই। সে অমানুষের মতো আহ্লাদিকে নির্যাতন করে। লাথি, ঝাঁটা, কলকেপোড়া ছ্যাঁকা, খুঁটির সাথে বেঁধে প্রহার করা -এভাবেই সে স্ত্রীকে নির্যাতন করে। যার জন্য আহ্লাদি স্বামীর ঘর ছাড়তে বাধ্য হয় এবং অত্যাচারের ভয়ে আবারও সেখানে যেতে চায় না।
৯. রাতের বেলা কানাই পেয়াদা নিয়ে আসে কেন?
উত্তর : মাসি-পিসিকে কাছারি বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য কানাই রাতের বেলা আসে। কানাই রাতের বেলা এসে হাঁক দেয় মাসি-পিসিকে তাদের কাছারি বাড়ির দারোগা বাবুর সামনে হাজির হবার জন্য। কিন্তু তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। কাছারি বাড়ির কথা বলে মাসি-পিসিকে বাড়ি থেকে বের করতে পারলে তারা অসহায় আহ্লাদিকে গোকুলের হাতে তুলে দিতে পারবে। এজন্য কানাই তিনজন পেয়াদা নিয়ে রাতের বেলা মাসি-পিসির বাড়িতে আসে।