আজকের বিষয়: সিরাজউদ্দৌলা নাটকের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
সিরাজউদ্দৌলা নাটকের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর
১. ‘অন্ধকারের ফাঁকা দরবারে বসে থাকে কোন লাভ নেই নবাব।’- কে কেন বলেছেন?
উত্তর: অন্ধকারের পাকা দরবারে বসে থেকে কোন লাভ নেই নবাব লুৎফুন্নেসা তার স্বামী নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে বলেছেন এ কথা। পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের পর নবাব সিরাজউদ্দৌলা পুনরায় সংঘঠিত হতে মুর্শিদাবাদ তার দরবারে ফিরে আসেন। যুদ্ধে নবাবের পরাজয়ের খবর শুনে সাধারণ মানুষদের ছেড়ে পালাতে শুরু করে। নবাব তখন বিভিন্ন লোকের সাথে পরামর্শ করতে থাকেন, জনগণকে সংঘবদ্ধ করতে চান কিন্তু কোন লাভ হয় না। অবসন্ন নবাবের কাছে আসেনি স্ত্রী লুৎফা। তিনি নবাবের মাথায় হাত রেখে তাকে ডাকেন এবং আরো উক্তিটি করেন। তিনি নবাবকে সাহস যোগান এবং তাকে প্রাসাদ ত্যাগ করতে বলেন।
২. লবণ প্রস্তুতকারকের ওপর ইংরেজদের অত্যাচারে নবাব নিজেকে দায়ী করছেন কেন?
উত্তর: লবণ প্রস্তুতকারকের উপর ইংরেজদের অত্যাচারে নবাব দুর্বল শাসন ব্যবস্থার জন্য নিজেকে দায়ী করেছেন। নবাব নিজে যাচাই না করে রাজ অমাত্যদের পরামর্শেই ইংরেজদের লবণের ইজারা দিয়েছিলেন। তাতে দেশের রাজস্বের পরিমাণ বাড়বে, দেশের অর্থনীতি মজবুত হবে- এ ছিল নবাবের ভাবনা। আর ইংরেজরা ব্যবসায় না করে প্রায় ডাকাতি করছিল, প্রজাদের উপর জুলুম-নির্যাতন করেছিল। লবণ প্রস্তুতকারক প্রজাদের উপর অত্যাচার দেখে নিজেকে দায়ী করেছিলেন, যাতে রাজ-অমাত্য নিজেদের ভুল বুঝতে পারেন।
৩. ইংরেজরা ডাচ ও ফরাসিদের সাহায্য চেয়েছিল কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: নবাবের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য ইংরেজরা ডাচ ও ফরাসিদের কাছে সাহায্য চেয়েছিল। সুচতুর ইংরেজরা কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ গোপনে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে। নবাব সিরাজউদ্দৌলা সেই খবর পান এবং ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ আক্রমণ করেন। ইংরেজরা সেই আক্রমণের খবর পেয়ে নিজেদের স্বল্প সৈন্য ও অস্ত্রের কথা চিন্তা করে ডাচ ও ফরাসিদের কাছে সাহায্য চেয়েছিল। তারা ভেবেছিল ডাচ ও ফরাসিদের কাছ থেকে সাহায্য পেলে সহজেই নবাবের সৈন্যদের প্রতিহত করতে পারবে।
৪. অত্যাচারীর বিরুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলার মনোভাব কেমন ছিল?- ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: অত্যাচারীর বিরুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলার মনোভাব ছিল কঠিন থেকে কঠিনতর। নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন প্রজাহিতৈষী। তিনি প্রজাদের ওপর কোনোরূপ অত্যাচার করতেন না। অথচ নবাবের নির্দেশ অমান্য করেই ইংরেজ কুঠিয়ালরা প্রজাদের উপর নির্মম নির্যাতন করে। নবাব এক লবণচাষীকে নির্যাতিত হতে দেখে সহ্য করতে পারেননি। তাই তিনি অত্যাচারী ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রজাদের কঠিন অবস্থান নিতে আহ্বান জানান এবং নিজেও এ ব্যপারে কঠোর হন।
৫. নবাবের আদেশ অমান্য করে ড্রেকের কৃষ্ণবল্লভকে আশ্রয় দেওয়ার কারণ কি?
উত্তর: নবাবের আদেশ অমান্য করে ড্রেকের কৃষ্ণবল্লভকে আশ্রয় দেওয়ার কারণ অর্থের প্রতি লোভ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি ড্রেক ছিলেন অত্যন্ত অর্থলোভী। অর্থের লোভে তিনি নবাবের আদেশ অমান্য করে কৃষ্ণবল্লভকে আশ্রয় দেন। কারণ এর বিনিময়ে তিনি অনেক অর্থ লাভ করেন। অর্থ লাভ করলেও পরবর্তীতে কৃষ্ণবল্লভকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য ড্রেক নবাবের রোষানলে পড়েন।
৬. যুদ্ধ চলাকালে মোহনলাল নবাব সিরাজকে রাজধানীতে ফিরে যেতে বলেছিলেন কেন? সিরাজউদ্দৌলা নাটকের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
উত্তর: যুদ্ধ চলাকালে নতুন করে শক্তি সঞ্চয় এর জন্য মোহনলাল পলাশীর প্রান্তর থেকে সিরাজউদ্দৌলাকে রাজধানীতে ফিরে যেতে বলেছিলেন। পলাশীর যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে নবাব নিজে যখন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত তখন মোহনলাল নবাবকে অবিলম্বে রাজধানীতে ফিরে যেতে বলেন। কারণ সেখানে গিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে আত্মরক্ষার চেষ্টা করতে হবে। যুদ্ধের বিধি অনুসারেই হাল ছেড়ে বিজয়ী শত্রুর কাছে আত্মসমর্পণ করা যাবে না। স্বাধীনতা বজায় রাখার শেষ চেষ্টা করতে হবে এসব কারণে মোহনলাল নবাবকে রাজধানীতে ফিরে যেতে বলেছিলেন।
৭. হলওয়েল সাদা নিশান ওড়াতে বলেছিলেন কেন?
উত্তর: নবাবের সঙ্গে শান্তিচুক্তি করার জন্য হলওয়েল সাদা নিশান ওড়াতে বলেছিলেন।
কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ নবাবের সঙ্গে ইংরেজদের প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। এতে নবাবের সৈন্যবাহিনী ইংরেজ বাহিনীকে পরাজিত করে। তখন হলওয়েল বুঝতে পারেন যে যুদ্ধরত অবস্থায় ধরা পড়লে তার মৃত্যু অনিবার্য। তাই তিনি যুদ্ধে শান্তিচুক্তি করার জন্য সাদা নিশান ওড়াতে বলেছিলেন।
৮. সিরাজউদ্দৌলা ঘসেটি বেগমকে নিয়েছে প্রাসাদে রাখতে চেয়েছিলাম কেন?
উত্তর: সিরাজউদ্দৌলা ষড়যন্ত্র থেকে দূরে রাখার জন্য ঘসেটি বেগমকে নিজ প্রাসাদে রাখতে চেয়েছিলেন।
নবাব সিরাজউদ্দৌলার বড় খালা ঘসেটি বেগম। সিরাজ নবাব হওয়ায় সবচেয়ে বেশি ঘষেটি বেগমের স্বার্থে আঘাত লাগে। তাই তিনি ইংরেজ ও দেশীয় রাজ্যের সঙ্গে সিরাজের পতনের জন্য গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। এই বিষয়টি সিরাজ তাঁর গুপ্তচর মারফত জানতে পারেন। তাই তিনি ঘসেটি বেগমকে নিজ প্রাসাদে রেখে তার ওপর নজরদারি জোরদার করেন, যাতে তিনি কোন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে না পারেন।
৯. নবাব সিরাজউদ্দৌলা কেন নিজেকে শ্রেষ্ঠ বীর বলে আখ্যায়িত করেছেন?
উত্তর: নবাব আলীবর্দী খাঁর সঙ্গে থেকে বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বিজয় অর্জন করেছেন বলে নবাব সিরাজউদ্দৌলা নিজেকে শ্রেষ্ঠ বীর বলে আখ্যায়িত করেছেন। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার নানা ছিলেন নবাব আলীবর্দী খাঁ। তিনি অত্যন্ত সাহসী এবং বিভিন্ন রাজ্যবিজয়ী নবাব ছিলেন। তার সঙ্গে নবাব সিরাজউদ্দৌলাও যুদ্ধে যেতেন এবং বিপক্ষ শক্তির কাছ থেকে বিজয় ছিনিয়ে আনতেন। তিনি ছিলেন প্রবল আত্মবিশ্বাসী একজন নবাব। নানার সঙ্গে বিভিন্ন যুদ্ধে গিয়ে বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন বলে তিনি নিজেকে বাংলার শ্রেষ্ঠ বীর বলে আখ্যায়িত করেছেন।
১০. ক্লাইভ উমিচাঁদকে যুগের সেরা বিশ্বাসঘাতক বলেছেন কেন? সিরাজউদ্দৌলা নাটকের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
উত্তর: অর্থের মোহে উমিচাঁদ যেকোনো কাজ করতে পারেন বলে ক্লাইভ উমিচাঁদকে যুগের সেরা বিশ্বাসঘাতক বলেছেন।
অর্থের প্রতি অপরিসীম লোভ উমিচাঁদের। অর্থের মোহে পড়ে তিনি যে কোন ধরনের কাজ করতে পারেন। তিনি অর্থের জন্য নবাবকে ছেড়ে যেমন ইংরেজদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন তেমনি আবার অর্থের জন্য ইংরেজদের ছেড়ে দিতে পারেন। এজন্য ক্লাইভ তাকে যুগের সেরা বিশ্বাসঘাতক বলেছেন।
অতিরিক্ত অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর
১. মিরমর্দানের পরিণতি কেমন হয়েছিল?
উত্তর : যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুই মিরমর্দানের শেষ পরিণতি হয়েছিল। পলাশীর যুদ্ধক্ষেত্রে ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রচ- যুদ্ধ চলাকালে নবাবের সৈন্যদলের বিভিন্ন সেনাপতি যখন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তখন মিরমর্দান অমিতবিক্রমে দেশের জন্য যুদ্ধ করে গেছেন। সেনাপতি মিরজাফরও যুদ্ধক্ষেত্রে কাঠের পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে যুদ্ধ দেখছে। ইতোমধ্যে বৃষ্টিপাতের ফলে গোলাবারুদ ভিজে অকেজো হয়ে যায়। অন্য উপায় না দেখে মিরমর্দান শুধু তরবারি নিয়ে মুখোমুখি যুদ্ধ করে যান। আর এভাবে যুদ্ধ করতে করতেই যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি শহীদ হন।
২. ‘আশা করি নবাব আমাদের উপরে অন্যায় জুলুম করবেন না’- হলওয়েলের নবাবের প্রতি এ বিশ্বাসের কারণ কী?
উত্তর : নবাব হলওয়েলকে তার কৃতকার্যের উপযুক্ত প্রতিফল নেবার জন্য তৈরি হতে বললে কাতর স্বরে হলওয়েল উদ্ধৃত আবেদন জানায়। নবাব বাহিনী ইংরেজ সৈন্যদের ওদ্ধত্যের প্রতিশোধ নেবার জন্য ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে হামলা চালালে ইংরেজ বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ক্যাপ্টেন ক্লেটনসহ সেনা কর্মকর্তাদের অনেকেই প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যায় দুর্গ থেকে। ইংরেজ বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সার্জন হলওয়েল। এমন সময় সিরাজউদ্দৌলা সসৈন্যে ইংরেজ দুর্গে ঢুকে ভর্ৎসনার সুরে হলওয়েলকে বলে কোম্পানির ঘুষখোর ডাক্তার রাতারাতি সৈন্যধাক্ষ্য হয়ে বসেছ।
৩. মার্টিন কেন ড্রেকের কাছে তাদের ভবিষ্যৎটা জানতে চেয়েছে?
উত্তর : সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের কাছে জিনিসপত্র বিক্রি করতে নিষেধ করলে ভাগীরথীতে এক জাহাজ থেকে মার্টিন ড্রেকের কাছে তাদের ভবিষ্যৎটা জানতে চেয়েছে। মার্টিনরা ভাগীরথীর যে জাহাজে সেখান থেকে হাটবাজার অনেক দূরে। নবাব ইতোমধ্যে তাদের কাছে যেকোনো জিনিসপত্র বিক্রি করতে নিষেধ করেছে। চারগুণ দাম দিয়ে অতি সঙ্গেপনে জিনিস কিনতে হয়। এ অবস্থা কত দিন চলবে এবং শেষই বা কোথায়। ধৈর্যহারা মার্টিন তা আজ জানতে আগ্রহী। এখানে ইংরেজদের দুর্দশার চিত্র অঙ্কিত হয়েছে।
৪. ইংরেজ সৈন্যরা তাদের দুর্দশার জন্য ড্রেককে দায়ী করলেন কেন? সিরাজউদ্দৌলা নাটকের অনুধাবন প্রশ্ন উত্তর (PDF)
উত্তর : সকলের ধারণা ড্রেকের ভুল পদক্ষেপের জন্যই ইংরেজদের দুর্দশা। এ কারণে সবাই ড্রেককে দায়ী করলেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত ইংরেজ সেনা পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে ভাগীরথীর জলে ভাসমান জাহাজে। কলকাতার গভর্নর রজার ড্রেকও কাপুরুষের মতো ভয়ে সেখানে পালিয়ে গেছেন। জাহাজে আশ্রয়রত সকলের অবস্থা পানীয় ও খাদ্যের অভাবে এবং নিরাপত্তার অভাবে উৎকণ্ঠায় অসহনীয় হয়ে ওঠেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে সকলেই ড্রেককে দায়ী করেছে।
৫. ঘসেটি বেগম কেন সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে গেলেন?
উত্তর : নিঃসন্তান বিধবা মাতৃস্থানীয়া সিরাজের খালা ঘসেটি বেগমের বাংলার শাসনভার নিয়ন্ত্রণে অভিলাষী ছিলেন বলেই সিরাজের বিরুদ্ধে গেলেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করার জন্য ঘসেটি বেগম গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। তার বাড়িতেই সে সিরাজ বিরোধী গোপন ষড়যন্ত্রের বৈঠক করে শওকত জঙ্গকে নবাব হিসেবে সিংহাসনে বসানোর প্রয়াস নিয়েছেন। সিরাজ থাকতে সে যে সুবিধা পাচ্ছে না শওকত জঙ্গ নবাব হলে সে সেই সুবিধা ভোগ করতে পারবে। তাছাড়াও ঘসেটি বেগমের এ ক্ষমতার প্রচ- লোভ ছিল বলেই সিরাজের বিরুদ্ধে তার হিংস্র মনোবৃত্তির পরিচয় পাওয়া যায়।
৬. ঘসেটি বেগম সিরাজউদ্দৌলাকে অভিশাপ দিলেন কেন? সিরাজউদ্দৌলা নাটকের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
উত্তর : জলসা ভেঙে দিয়ে ঘসেটি বেগমকে প্রাসাদে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়ায় ঘসেটি বেগম ক্রোধে সিাজউদ্দৌলাকে অভিশাপ দেন। ঘসেটি বেগম কৌশলে নবাবকে সিংহাসনচ্যুত করে শওকত জঙ্গকে নবাব হিসেবে সিংহাসনে বসানোর ষড়যন্ত্র করেন। গুপ্তচরের মাধ্যমে এ ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরে সিরাজউদ্দৌলা আকস্মিকভাবে সেখানে উপস্থিত হন এবং জলসা ভেঙে দিয়ে ঘসেটি বেগমকে প্রাসাদে চলে যাবার অনুরোধ করেন। সিরাজের এ আচরণে ক্রুদ্ধ ঘসেটি বেগম তাঁকে বন্দি করতে আসার অভিযোগে সিরাজকে অভিশাপ দেন।
৭. নবাব সিরাজউদ্দৌলা নিজেকে নিজেই অভিযুক্ত করেছেন কেন?
উত্তর : বাংলার প্রজা সাধারণের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করতে পারেন নি বলেই নবাব সিরাজউদ্দৌলা নিজেকে নিজেই অভিযুক্ত করেছেন। প্রজাবৎসল দয়ালু শাসক সিরাজউদ্দৌলার সার্বক্ষণিক চিন্তা ছিল কীভাবে প্রজাদের সুখ ও শান্তি হয়। অথচ তাঁর রাজ্যের প্রজারাই আজ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাতে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। অতিরিক্ত কর প্রদান করে তারা সর্বস্বান্ত হচ্ছে। শাসক হয়ে প্রজাদের কুঠিয়ালদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করতে পারেন নি বলেই নিজে নিজেকে অভিযুক্ত করে বলেছেনÑ “আপনাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ জানার বাসনা আমার নেই। আমার নালিশ আজ আমার নিজের বিরুদ্ধে।”
৮. নবাবের প্রতি ক্লাইভের ভয় না থাকার কারণ কী?
উত্তর : ক্লাইভ জানেন পরিষদবর্গের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে নবাব শক্তিশূন্য ও অবলম্বনহীন তাই নবাবের প্রতি তাঁর কোনো ভয় নেই। সতেরো বছর বয়সে ভারতবর্ষে আগত ক্লাইভ ফরাসি এবং মারাঠাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে সঞ্চয় করেন প্রকৃত অভিজ্ঞতা সম্মুখ যুদ্ধের চেয়ে নেপথ্য যুদ্ধ যে অনেক কার্যকর তা ধূর্ত ক্লাইভ মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন। পলাশী যুদ্ধে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা তাঁর পরিষদবর্গের ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিণত হয়েছে। এজন্যই উৎকণ্ঠায় রবার্ট ক্লাইভ ঘোষণা করেছেন তাঁর নিজের নির্ভয়ের কথা।
৯. ‘আমরা এমন কিছু করলাম যা ইতিহাস হবে।” কথাটির ভাবার্থ কী? সিরাজউদ্দৌলা নাটকের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
উত্তর : ‘সিরাজউদ্দৌলা’ নাটকে ইংরেজ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভের এ উক্তিটি নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করে বাংলার সিংহাসন করায়ত্ত করতে নিজ নিজ সংকীর্ণ স্বার্থকে বাস্তবে রূপদান করতে সংঘবদ্ধ বিশ্বাসঘাতকদের সবাই ইংরেজদের সাথে সন্ধি করে। সন্ধিপত্রে এক এক করে জগৎশেঠ, মিরজাফর, রাজবল্লভ সবাই স্বাক্ষর দেয়। আর এর দ্বারাই সূচিত হয় বাংলার পরাধীনতার সনদ। এ সনদই শত্রুদের বিজয় বার্তা ঘোষণা করে ১৭৫৭ সালে ২৩ জুন ঐতিহাসিক পলাশীর প্রান্তরে।