সোনার তরী কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (PDF)

 সোনার তরী কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর : সোনার তরী কৃষকের উৎপাদিত ধানে ভরে গিয়েছিল বলে সেখানে কৃষকের ঠাঁই হয়নি। কর্মফলস্বরূপ রাশি রাশি সোনার ধান কেটে নিঃসঙ্গ কৃষক নদীতীরে অপেক্ষমাণ ছিলেন। এ সময় ভরা পালে তরী বেয়ে একজন অচেনা মাঝির আগমন ঘটে।

কৃষকের অনুরোধে মাঝি তাঁর সমস্ত ধান নৌকায় তুলে নিলে নৌকা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ফলে সেখানে কৃষকের স্থান সংকুলান হয় না। প্রকৃতপক্ষে, মহাকাল-রূপ সোনার তরীতে কর্মফল জায়গা পেলেও সেখানে ব্যক্তিমানুষ স্থান পায় না। এই অমোঘ বাস্তবতার কারণেই ফসলে পরিপূর্ণ সোনার তরীতে কৃষক ঠাঁই পাননি।

সোনার তরী কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন সিরাজউদ্দৌলা নাটক MCQ (উত্তরসহ) PDF Download

১. ‘বাঁকা জল’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর : ‘বাঁকা জল’ বলতে ভরা বর্ষায় নদীর জলের ভয়ংকর রূপ ধারণের বিষয়টিকে বোঝানো হয়েছে। কবিতায় এক নিঃসঙ্গ কৃষক সোনার ধান কেটে নদীতীরবর্তী খেতে অপেক্ষমাণ। আকাশে ঘন মেঘের গর্জন, বর্ষার ভরা নদীর ক্ষুরধারা স্রোতের সাথে এর জলও বাঁকা হয়ে খেলা করছে। ছোটো খেতটুকুকে ধীরে ধীরে গ্রাস করে চলেছে তা। এভাবে ‘বাঁকা জল’ শব্দবন্ধের ভেতর দিয়ে কবিতাটিতে বৈরী প্রকৃতির রুদ্ররূপের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। এছাড়া ‘বাঁকা জল’ কবিতাটিতে অনন্ত কালস্রোতের প্রতীক।

২. কবিতাটিতে মেঘে ঢাকা গ্রামের চিত্রকল্পের ভেতর দিয়ে প্রকৃতির কোন রূপটি প্রকাশিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : কবিতাটিতে মেঘে ঢাকা গ্রামের চিত্রকল্পের ভেতর দিয়ে বর্ষা প্রকৃতির রূপটি প্রকাশিত হয়েছে। ‘সোনার তরী’ কবিতায় গ্রামীণ চিত্রকরে ভর করে কবিতাটির মূলবক্তব্য উপস্থাপন করেছেন কবি। এরই ধারাবাহিকতায় কবিতাটিতে তিনি দূরের মেঘাচ্ছন্ন গ্রামের চিত্রপট উপস্থাপন করেছেন। সাধারণত বর্ষাকালেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে। এই মেঘাচ্ছন্ন আকাশ মূলত ভারি বৃষ্টিপাতসহ দুর্যোগের ইঙ্গিতবাহী। এর মধ্য দিয়ে আলোচ্য কবিতায় বর্ষা-প্রকৃতির দুর্যোগময় রূপটিকেই উন্মোচন করা হয়েছে।

 

 

৩. কবিতায় ‘একখানি ছোটো খেত’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। সিরাজউদ্দৌলা নাটক MCQ (উত্তরসহ) PDF Download
উত্তর : কবিতায় ‘একখানি ছোটো খেত’ বলতে মানুষের কর্মক্ষেত্র হিসেবে পৃথিবীকে বোঝানো হয়েছে। আলোচ্য কবিতায় প্রতিটি অনুষঙ্গই রূপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। সেখানে উল্লিখিত ছোটো ক্ষেতটি কৃষকের চাষাবাদের ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত হলেও এর গূঢ়ার্থ হলো পৃথিবী অর্থাৎ মানুষের কর্ম সম্পাদনের জায়গা। বস্তুত, প্রতিকূল পরিবেশের সাথে লড়াই করেই পৃথিবীতে মানুষকে কর্মসম্পাদন করতে হয়। আলোচ্য কবিতাটিতে কবিগুরু মানুষের কর্মক্ষেত্র হিসেবে ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ এই সীমাবদ্ধ পৃথিবীকেই ‘একখানি ছোটো খেত’ বলে উপমিত করেছেন।

৪. মাঝি চলে যাওয়ার সময় কোনো দিকে তাকায়নি কেন? ব্যাখ্যা করো। সিরাজউদ্দৌলা নাটক MCQ (উত্তরসহ) PDF Download
উত্তর : মহাকালরূপ মাঝি জাগতিক ঘটনা সম্পর্কে নিরাবেগ বলে চলে যাওয়ার সময় সে কোনোদিকে তাকায় না। আলোচ্য কবিতায় মূলত মহাকালের প্রতীক। আর মহাকাল কেবল মানুষের কর্মফলকেই গুরুত্ব দেয়। সেখানে ব্যক্তিমানুষ বা জাগতিক ঘটনাবলির স্থান নেই। অর্থাৎ জাগতিক ব্যস্ততা মহাকালকে স্পর্শ করতে পারে না। এ বিষয়ে মহাকাল সর্বদাই নিরাসক্ত ও নিরাবেগ। এ কারণেই মহাকালরূপ মাঝি চলে যাওয়ার সময় কোনো দিকে তাকায়নি।

৫. “যাহা লয়ে ছিনু ভুলে” বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মাধ্যমে কবির সৃষ্টিকর্ম নিয়ে জীবনভর মগ্ন থাকার দিকটিকে বোঝানো হয়েছে। সৃষ্টিশীল কবির দৃষ্টিতে সৃষ্টিকর্মই তাঁর ধ্যান-জ্ঞান সবকিছু। শিল্পসাধনাতেই তিনি তাঁর সমগ্র জীবন অতিবাহিত করেছেন। শিল্পকর্মে মগ্ন থাকার কারণে আর কিছু নিয়ে ভাবার তেমন সময় পাননি। অথচ শেষবেলায় মহাকালের খেয়ায় সেসব সৃষ্টিকর্মের স্থান হলেও তিনি নিজে সেখানে স্থান পাননি। সংগত কারণেই সারাজীবন সৃষ্টিকর্ম নিয়ে মগ্ন থাকার কথা তিনি আক্ষেপডরে প্রকাশ করেছেন। প্রশ্নোত্ত কথাটির মাধ্যমে এ বিষয়টিই প্রকাশিত হয়েছে।

৬. ‘একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা’ – ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মধ্যদিয়ে কবি পৃথিবীতে মানুষের চিরন্তন একাকিত্বের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছেন। আলোচ্য চরণটিতে ‘ছোটো খেত’ বলতে মানুষের কর্মজগৎকে বোঝানো হয়েছে। বস্তুত, মানুষকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত কাজ করে যেতে হয়; কাজ থেকে মানুষের নিষ্কৃতি নেই। আর এই কর্মক্ষেত্রে কর্মী ব্যক্তিমানুষ নিজেই। এক্ষেত্রে তার কোনো ভাগীদারও নেই। প্রশ্নোত্ত চরণটিতে ব্যক্তিমানুষের নিঃসঙ্গতার এই বিষয়টিই মূর্ত হয়ে উঠেছে।

 

 

৭. সোনার তরীতে কৃষকের ঠাঁই হলো না কেন?
উত্তর :  সোনার তরী কৃষকের উৎপাদিত ধানে ভরে গিয়েছিল বলে সেখানে কৃষকের ঠাঁই হয়নি। কর্মফলস্বরূপ রাশি রাশি সোনার ধান কেটে নিঃসঙ্গ কৃষক নদীতীরে অপেক্ষমাণ ছিলেন। এ সময় ভরা পালে তরী বেয়ে একজন অচেনা মাঝির আগমন ঘটে। কৃষকের অনুরোধে মাঝি তাঁর সমস্ত ধান নৌকায় তুলে নিলে নৌকা পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ফলে সেখানে কৃষকের স্থান সংকুলান হয় না। প্রকৃতপক্ষে, মহাকাল-রূপ সোনার তরীতে কর্মফল জায়গা পেলেও সেখানে ব্যক্তিমানুষ স্থান পায় না। এই অমোঘ বাস্তবতার কারণেই ফসলে পরিপূর্ণ সোনার তরীতে কৃষক ঠাঁই পাননি।

৮. তরীটিকে কেন ‘সোনার তরী’ বলা হয়েছে?
উত্তর : তরীটি মহামূল্যবান মহাকালের প্রতীক বলেই এটিকে সোনার তরী বলা হয়েছে। ‘সোনার তরী’ একটি রূপক কবিতা। কবিতাটিতে প্রতিটি অনুষঙ্গই রূপায়িত। এর প্রতিটির আলাদা অর্থ রয়েছে। কবিতাটিতে তরী বলতে মহাকালকে বোঝানো হয়েছে। সময় অমূল্য, কোনো কিছু দিয়েই তার মূল্য নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। আর তাই কবিতাটিতে মহাকালরূপী তরীটিকে তাৎপর্যম-িত করে তুলতেই সেটিকে সোনার তরী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

৯. দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর : ধান কেটে অপেক্ষমাণ কৃষকের সামনে এক মাঝির আগমন হলে প্রথম দেখায় মাঝিকে তার পরিচিত বলে মনে হয়। আলোচ্য কবিতায় বর্ষার বৈরী পরিবেশে বিপদাপন্ন এক কৃষককে কেন্দ্র করে কবিতাটির ভাবসত্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন কবি। সেখানে সোনার ধানরূপী কর্মফল নিয়ে কৃষক অপেক্ষমাণ। চারদিকে বর্ষার ক্ষুরধারা পানি ঘুরে ঘুরে খেলা করছে, যেন মুহূর্তেই ভাসিয়ে নেবে তাঁর ছোটো খেতটিকে। এমনই আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে হঠাৎ সেখানে এক মাঝির আগমন হয়। মহাকালের প্রতীক এই মাঝিকে ব্যক্তি কৃষকের পরিচিত বলে মনে হতে থাকে। প্রশ্নোক্ত চরণটিতে এ বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।

১০. কবিতাটিতে ‘পরপার’ বলতে মূলত কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। সিরাজউদ্দৌলা নাটক MCQ (উত্তরসহ) PDF Download
উত্তর : কবিতাটিতে ‘পরপার’ বলতে মূলত পরকালের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সোনার তরী’ একটি রূপক কবিতা। এ কবিতার কৃষক হলেন শিল্পস্রষ্টা কবি নিজেই। নদীর জল কাল সলিলের প্রতীক আর নদীর অপর পাড় তথা পরপার হলো মৃত্যু-পরবর্তী জগৎ। এভাবে ‘পরপার’ শব্দটির মধ্য দিয়ে কবিতাটিতে পরকালের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে।

 

 

Answer Sheet

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *